আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আপনাদেরকে আমাদের এই ব্লগ পোস্টটিতে স্বাগতম। আজকে আমরা সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে এই ব্লগ টির মাধ্যমে জানবো। আমরা আলোচনা করব এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে বা ইসলামে এই নামাজের গুরুত্ব কতটা। এই নামাজ সম্পর্কিত যে সকল হাদিস রয়েছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করা হবে।যারা সালাতুল তাসবিহ নামাজ সম্পর্কে পূর্বে জানেন না, এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সালাতুল তাসবিহ নামাজের সকল নিয়ম।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম
১। নিয়তঃ প্রথমে সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ার নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির দিয়ে নামাজ শুরু করুন।
২। সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাঃ প্রথমে ‘সূরা ফাতিহা’ পড়ুন এবং তারপর কুরআন শরীফের যে কোনো একটি ছোট সূরা পড়ুন। সাধারণত ‘সূরা ইখলাস’ পড়া হয়ে থাকে, তবে যে কোনো সূরা পড়া যেতে পারে।
৩। ১৫ বার তাসবিহঃ সূরা পড়া শেষ হওয়ার পর, দাঁড়িয়ে ১৫ বার এই তাসবিহটি পড়ুনঃ
- সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
৪। রুকুঃ এরপর রুকুতে যান এবং রুকুতে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম’ পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়ুন।
৫। সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহঃ রুকু থেকে উঠার পর ‘সামি‘ আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলার পর আবার ১০ বার তাসবিহ পড়ুন।
৬। সিজদাহঃ প্রথম সিজদাহতে যান এবং ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা’ পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়ুন।
৭। জলসাহঃ সিজদা থেকে উঠার পর বসে ১০ বার তাসবিহ পড়ুন।
৮। দ্বিতীয় সিজদাহঃ দ্বিতীয় সিজদায় যান এবং ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা’ পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়ুন।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ التَّسْبِيحِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ لِلَّهِ تَعَالَى، وَجْهَ اللهِ الْكَعْبَةِ.
উচ্চারণঃ
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাত-তাসবীহি আরবাআ রাকা'আতিন লিল্লাহি তা'আলা, ওয়াজহাল্লাহিল কা'বা।
অর্থঃ আমি চার রাকাত সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ার নিয়ত করছি, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ত বাংলায়
আমি চার রাকাত সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ছি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে, আল্লাহু আকবার।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত
নবী কারীম (সা.) বলেছেন, যারা নিয়মিত সালাতুল তাসবিহ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তাদের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেন। বিশেষত যেসব গুনাহ ছোট এবং ভুল করে হয়েছে, সেগুলো মাফ হওয়ার জন্য এই নামাজটি অত্যন্ত কার্যকর। আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য এটি একটি বিশেষ সুযোগ।
সালাতুল তাসবিহ পড়ার উপযুক্ত সময়
সালাতুল তাসবিহ পড়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। এটি যেকোনো সময় পড়া যেতে পারে। তবে দিনের বেলা (দুহা সময়), রাতের বেলা, বিশেষত তাহাজ্জুদের সময় পড়লে বেশি ফজিলত লাভ হয়।
সালাতুল তাসবিহ নামাজ সম্পর্কে হাদিস
সালাতুল তাসবিহ এমন একটি বিশেষ নামাজ, যা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং সওয়াবের একটি মাধ্যম। এই নামাজটি নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সুন্নাহ এবং তিনি এটি তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে শিখিয়েছেন। যারা সালাতুল তাসবিহ পড়েন, তাদের পাপ মাফ হয় এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের সুযোগ হয়।
সালাতুল তাসবিহ নামাজ সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। বিশেষত, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ হিসেবে সুপরিচিত। হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর চাচা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-কে এই নামাজ পড়ার জন্য শিক্ষা দিয়েছিলেন। হাদিসটি নিম্নরূপঃ
হাদিসের বিবরণঃ
হযরত ইকরিমা (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-কে বলেছিলেনঃ
হাদিসঃ
"হে আব্বাস, হে আমার চাচা! আমি কি তোমাকে দান করবো না? আমি কি তোমাকে উপহার দিবো না? আমি কি তোমাকে এরূপ কাজ শেখাবো না, যা করলে আল্লাহ তোমার প্রথম এবং শেষ, পুরনো এবং নতুন, ভুলে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দিবেন?"
এরপর তিনি বললেনঃ "তুমি চার রাকাত নামাজ পড়ো, এবং প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়ার পর ১৫ বার এই তাসবিহ পড়ো: 'সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।' তারপর রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠার পর ১০ বার, সিজদায় ১০ বার, সিজদা থেকে উঠার পর ১০ বার, দ্বিতীয় সিজদায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সিজদা থেকে ওঠার পর ১০ বার তাসবিহ পড়বে। এভাবে চার রাকাত পড়বে।"
তাসবিহঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
(সূত্রঃ সুনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বরঃ ১২৯৭; তিরমিজি, হাদিস নম্বরঃ ৪৮১)
হাদিসটির সারমর্মঃ
এই হাদিসে সালাতুল তাসবিহ নামাজের ফজিলত ও পড়ার নিয়ম স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এটি এমন একটি বিশেষ নামাজ যা পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দেন। সুতরাং, নিয়মিত সালাতুল তাসবিহ পড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বিশেষ উপায়।
সালাতুল তাসবিহ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
সালাতুল তাসবিহ একটি নফল নামাজ। এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে এর ফজিলত অনেক বেশি। এই নামাজের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু যারা এটি আদায় করেন, তাদের জন্য বিশেষ সওয়াবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে সালাতুল তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়ার এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
যদিও এটি হাদিসের আলোকে প্রিয় নবী (সা.)-এর সুপারিশকৃত নামাজ, অধিকাংশ ফকিহ এবং ইসলামি পণ্ডিতগণ এটিকে নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য করেন। এটি সুন্নত বা ফরজ নয়, তবে মুমিনরা ইচ্ছা করলে এটি আদায় করতে পারেন, এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারেন।
সংক্ষেপেঃ
সালাতুল তাসবিহ নফল নামাজ, যা একটি ঐচ্ছিক ইবাদত হিসেবে পালন করা যায়, এবং এটি পড়লে আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ সওয়াবের আশা করা যায়।
লেখক এর মন্তব্যঃ
এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা জেনে নিলাম সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত, সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ত, সালাতুল তাসবিহ পড়ার উপযুক্ত সময় এবং সালাতুল তাসবিহ নামাজ সম্পর্কে হাদিস। আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টস করতে ভুলবেন না। এইরকম আরো ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে ইসলামিক পোস্টগুলো আপডেট করা হয়। যদি আপনাদের কোন বিষয়ে জানার থাকে বা কোন পোষ্টের রিকোয়েস্ট থাকে, তাহলে দয়া করে আমাদের সাথে কন্টাক্ট ফর্ম থেকে যোগাযোগ করুন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আপনার রিকোয়েস্ট অনুযায়ী পোস্টগুলো দেওয়ার। ধন্যবাদ